Tuesday 8 October 2013

বাংলাদেশ

লক্ষক্রোশ হেঁটে আসা জট পাকানো পা,
লুকোচুরি আর জন্মান্তরের খেলায় কোটি বাঙ্গালের মা,
পুরু লেন্সের চশমা চোখে অভিজ্ঞ বুড়ীর মত,
অপত্যস্নেহে গোর্কির মায়ের মত চোখ ভরা জলে যুদ্ধরত ।

পুষ্টিহীন শিশুগুলো বেড়ে ওঠে বলহীন পুরুষে,
লুটপাট,ধর্ষণে,দখলে,শত শত জারজ ঔরসে,
যা পায় তার সবই খায় নাহি থাকে জমা,
তোমার যোগ্য নই,চুপ থাকি,চাই শুধু ক্ষমা ।

সহস্র বছরের জন্ম-মৃত্যু,প্রেম-শাদী ঘিরে,
বুড়ী ঘুরে পদ্ধা,মেঘনা,যমুনায় নীল সাগর তীরে,
ঘুরে,ঘুরে হাটেঁ নিরবে,সহস্রাব্ধের স্মৃতিতে ডুবে,
কবে হবে জন্ম আবার ? কবে জন্মাবে নব দিনমণি পূবে ?

কালো-সাদা পোড়ার গল্প ঘুরে ঘুরে মুখে,
ভুলে গেছে জন্মের কথা,হয়ত কোন প্রাগৈতিহাসিক যুগে,
গৌড়,বঙ্গ,পুন্ড্র,হরিকেল,সমতট,বরেন্দ্র-এ,
জমা হয় যত ইতিহাস স্নায়ুরন্দ্র-এ ।

কখনো আর্য,মৌর্য,গুপ্ত,পাল,সেনের দখল,
কখনো পরাজিত প্রতাপশালী মোঘল,
আক্রমণ চালায় গ্রিক,শক,পহলব,কূষাণ,
বাংলার প্রেমে পড়ে তুর্কী,হাবসি,আফগান ।

কেহ নাম দেয় গঙ্গারিড়ই কারো মতে ইকতা,
কতশত রাজা হয় কতশত মুকতা,
হাজার মেহমান আসে কথা কয় হাজার সুর,
কত কেহ চিঠি লিখে প্রিয় বুলগাকপুর ।

 বাংলা হয় প্রথম স্বাধীন আবাদ,
সোনারগাঁও,সাতগাঁও,ফিরোজাবাদ,
ইলিয়াস শাহ দেয় শাহী মান,
ইলিয়াস শাহ ই স্বাধীন শাহ-ই-বাঙ্গালিয়ান ।

প্রস্তুত হয় তোমার সন্তানরা প্রাণ দিতে,
আফগান আসে,আর্য আসে মসনদ নিতে,
শুরু হয় লোভ,অবিশ্বাসের গান,
স্বাধীন তরবারি ঘুরায় বঙ্গশার্দূল ঈশাখান ।

বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ,
জারজ রা সব বাংলা বিকে খোঁজে মিরাজ,
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী খোঁজে ক্ষমতার খণি,
পলাশীর প্রান্তে ডুবে যায় স্বাধীন দিনমণি ।

যাত্রা শুরু হয় সভ্যতা বদলের,
বাঙ্গালী ভাগ হয় বহুমতে বহু দলের,
ইংরেজের কূট চালে সংস্কৃতি মুছে যায়,
আজও বহু জারজ বাংলায় ঘুরে বেড়ায় ।

ওরা চলে যায় তোমায় বন্ধক রেখে,
কত সন্তান প্রাণ দেয় স্বাধীনতার ছবি এঁকে,
নতুন জমাদার বলে ঊর্দূ বল,নয় গলা টিপে ধরে,
ওরা জানতোনা কত বিদ্রোহ এ মনের ঘরে ।

আসে কত সূর্য সন্তান,আসে মুজিবর,
রক্তস্নানে শাদী হয়ে আসে নব বর,
কোথায় তোমার ঘর বুড়ী ? কোথায় তোমার দেশ ?
বুড়ীর চিন্তাস্রোত ভেঙ্গে যায়,দীর্ঘশ্বাস ফেলে-বাংলাদেশ ।


লেখক-শাহারীয়ার ওয়াহেদ
গর্জনিয়া,রামু,কক্সবাজার।
  

Sunday 15 September 2013

ষড় ঋতুর দেশ

গ্রীষ্মকালে খাঁ খাঁ করা রৌদ্র মাথার উপর,
রৌদ্র ঝরে কাটাফাটা রৌদ্রতাপে দুপুর,
কাল বোশাখী ঝাপ্টা মারে লক্ষ মুকুল ঝরে,
বৈশাখ মাসে আম-কাঁঠালে বাগান গেছে ভ্রে ।

বর্ষাকালে কাল্মেঘে নিভে সূর্য দৃষ্টি,
ঝর-ঝর-ঝর, ঝর-ঝর-ঝর, রাতে দিনে বৃষ্টি,
আষাঢ়-শ্রাবণ জলের ধারা জমে জমে  বান,
বানের জলে পলল ফেলে কৃষক ভাইয়ের গান ।

শরৎকালে অল্প ঠান্ডা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি,
কাশফুল আর চন্দ্রতারায় রাতের আকাশ মিষ্টি,
আকাশ জুড়ে ঠান্ডা আমেজ সাদা মেঘের ভেলা,
ভাদ্র-আশ্বিন ঘুরে বেড়ায় হঠাৎ বৃষ্টির খেলা ।

হেমন্ত কালে সোনার ধানে সারা বাংলা ভরা,
মনের রঙ্গে , খুশীর ঢঙ্গে , কৃষক ভাইয়ের ধরা,
বুক বাধেঁ কৃষক ভাইয়া গাহে নব গান,
অগ্রাহণে কৃষক ভাইয়া কাটে সোনার ধান ।

শিতকালে সারা বাংলা কুয়াশায় যায় ভরে,
শীতের পিঠা, খেজুর মিঠা, বানায় ঘরে ঘরে,
ভোরের রবি ঘুমিয়ে পড়ে কুয়াশা লেপে মুড়ি,
খড়-বিছালী জ্বেলে বুড়ো ভাগায় হীম্বুড়ি ।

বসন্তকালে আগুন লাগে সারা বাংলাময়,
ফুলে ফলে ভরে ভরে কোকিল ডাকের জয়,
সবুজ-শ্যামল, রং-বেরং, নেইকো রুপের শেষ,
এ আমার জন্মভূমি ষড় ঋতুর দেশ ।


লেখক- শাহারীয়ার ওয়াহেদ
গর্জনিয়া,রামু,কক্সবাজার।



















Sunday 1 September 2013

বিপর্যস্ত স্বাধীনতা

                                                           কু-শিক্ষায়, কু-শিল্পে দূর্ণীতি বাড়ে
                                                         দিন দিন ঋণের বোঝা এসে পড়ে ঘাডেঁ  ।
                                                           ভুল নেতার কথায় যুবক সব সন্ত্রাস,
                                                           জন-বিস্ফোরণে ধানী জমি হয় হ্রাস ।
                                                               নকল দখল করে পরীক্ষায় পাস,
                                                        ভুল শিক্ষার অহমিকায় জমি দেয়না চাষ ।
                                                           নেশা টানা পেশা আজ,যত মিথ্যা কথা,
                                                        সীমান্ত নিয়ে টানা ছিড়া,বিপর্যস্ত স্বাধীনতা ।
                                                             ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে যায় সব বটগাছ ,
                                                           পোড়াতেলে মরে যায় শতশত মাছ ।
                                                            মাছে-ভাতে বাঙ্গালী আজ গল্পকথা,
                                                          দিন দিন বেড়ে চলছে বাংলার ব্যাথা ।
                                                          হে নবীন এসো একটা বটগাছ রোপে দাও,
                                                             বুকবাঁধ দেশপ্রেমে, এ বাংলাকে বাঁচাও



লেখক-শাহারীয়ার ওয়াহেদ
গর্জনিয়া,রামু,কক্সবাজার।

Friday 26 July 2013

সংস্কৃতির ছড়া

শুকনো মরিচ পান্তাভাত
নববর্ষে অপূর্ব স্বাদ,
কোর্তা আর হলুদ শাড়ী
আনন্দ হয় বাড়ী বাড়ী ।

                                       নারিকেল,চিনি,বিন্নি ভাতে
                                       মিশিয়ে নিয়ে এক সাথে,
                                      মরিচ চাটনী অল্প তাতে
                                      ঝাল না হয় বেশী যাতে ।


গ্রামীণ চ্যাকের রঙ্গিন শাড়ী
বাশেঁর,ছনের,ছোট্ট বাড়ী,
নাকের নোলক কানের দুল
গ্রাম্য পিরীত নানান ফুল ।

                                     কলসী নিয়ে গ্রামের বধু,
                                     ঝোপের ভেতর পোকার মধু
                                     নদীর ঘাটে সুরের বাশিঁ,
                                    কৃষক ভাইয়ের মাঠের হাসি ।

পূজো,ঈদ,বড়দিন
ভাষা সৈনিকদের প্রেমের ঋণ,
মুক্তিযোদ্ধার প্রাণের ভিৎ
বাংলা স্মৃতি লক্ষ শহীদ ।

                                          বাংলা জুড়ে সারা বছর
                                          সবুজ-শ্যামল হাজার ছবি
                                          পশ্চিম পাড়ার রশিদ দাদা
                                           দার্শনিক আর অল্প কবি ।

লালনগীতি ভাটিয়ালী শোন
হিন্দি-উর্দূ দূর দূর,
কত আছে ভাব-ভাউল
বাংলা ই আমার মধুর সুর ।

                                        বারমাসে তের পার্বণ
                                        ধর্ম-কর্ম হাজার রীতি
                                     বিদেশ হতে ধার নিওনা
                                     এসব মোদের সংস্কৃতি ।

লেখক-শাহারীয়ার ওয়াহেদ
গর্জনিয়া,রামু,কক্সবাজার।

              

Thursday 25 July 2013

বাংলা

ঝিলের জলে শাপলা তোলে ছোট্ট কচি বালক,
ঝিলের জলে সাদা বকের ফেলে যাওয়া পালক।
বিল জুড়ে সব সোনালী ধান,কৃষক ভাইয়ের গান,
বিলের শেষে ছোট্ট কুঠির,কাক তাড়ুয়ার ভান।

প্রান্ত জুড়ে সবুজ-শ্যামল,সবুজ সব ছবি,
প্রান্ত জুড়ে রং ছড়িয়ে উঠছে পূবে রবি।

নদীর মাঝে রুপালী জল,স্রোতে জলের নাচ,
নদীর বুকে বেলে মাটি,জালে রুপোর মাছ।

আকাশ জুড়ে নীলের মাঝে সাদা মেঘের ভেলা,
আকাশ জুড়ে ঘুরে ঘুরে হরেক পাখির খেলা।

খালের পাড়ে ছোট্ট গ্রাম,ছোট্ট একটা বাজার,
খালের পাড়ে পাহাড় ঘেষে পীর-অলীদের মাজার।

পাড়ায় পাড়ায় একটা মসজিদ,পান-সুপারী-ছোরতা,
পাড়ার বুড়ো পান চিবিয়ে গায়ে লুঙ্গি কোর্তা।

দেশ জুড়ে সব সুরের মালা,স্বাধীনতার স্মৃতি,
দেশ জুড়ে সব ধর্ম-কর্ম, বহু প্রাচীন কীর্তি।
ছবির মত দেশটি  আমার,হেথায় হোথায় জংলা,
ছবির দেশ কবির দেশ এ আমরি বাংলা।

Thursday 4 July 2013

একটি দোয়েল


একটি দোয়েল কিচ কিচ শব্দ তুলে,
এগাছ ওগাছ ঢালে ঢালে,
সাদা-কালো পাখনাগুলো,
ভালবাসার কথা বলে।

                         একটি দোয়েলের দিকে হাজার রাইফেল তাক।
                              কেটেকুটে শতভাগ,
                              শত শত লোভীর ভীড়ে,
                          কলিজাটা নিচ্ছে ছিঁড়ে।

একটি দোয়েল বাংলাদেশে,
হাটে, মাঠে, নদীর ঘাটে,
উড়ছে যত স্বাধীন পথে,
গণতন্ত্র মুক্তি পেতে,নানা মুনীর নানা মতে।

Tuesday 9 April 2013

কিছু সংলাপ

না মুসলমান, না হিন্দু,
না খ্রীষ্টান, না বৌদ্ধ,
আমিই হোলাম হালাকু-চেঙ্গিশ,
বিভীষিকাময় যুদ্ধ ।

না পুরুষ , না নারী
না জড় , না প্রাণ,
আমিই হোলাম উদ্ভট সাম্যবাদ,
না আছে আমার জ্ঞান ।

না ভাল , না মন্দ,
না তেতো, না স্বাদ,
আমিই হোলাম শয়তানের মন্ত্র,
ধর্ম নিরপেক্ষতা  বাদ ।

না তন্ত্র, না মন্ত্র,
না উক্তি, না যুক্তি,
আমিই হোলাম সাম্রাজ্যবাদ ,
না আছে তোদের মুক্তি ।

না রোদ , না বৃষ্টি
না প্রেম, না কাব্যতা,
আমিই হোলাম রুঢ় ঋতু,
আধুনিক এই সভ্যতা ।

না তর্ক, না বিতর্ক,
না বিদেশ , না দেশ,
আমিই হোলাম উদ্ভট জাতির
উদ্ভট এই বাংলাদেশ ।

 লেখক- শাহারীয়ার ওয়াহেদ
গর্জনিয়া, রামু, কক্সবাজার।






Monday 25 March 2013

উত্তাল মার্চ



 যম পর্ষদের মিটিং বসে,সীমান্তের তীরে
নানা জনের আনাগোনা,কানে কানে কথা,
বঙ্গবন্ধুর মুখে বাংলার ব্যাথা।
      
                                        মার্চ শুরু হয় একটা জনসমুদ্র দিয়ে,
                                       পিল পিল পিঁপড়ার মত মাঠে জমে
                                      হাজার-লক্ষ মানুষ,স্বাধীনিতার  শপথ বুকে ।
                                       

সন্তান,স্বামী-স্ত্রী,ভাই-বোন পরস্পরে
বিদায় নেয় । নব ভিৎ রচনার শপৎ এ
ময়দানে যাবে । হয় শহীদ,নয় স্বাধীনতা ।

                                          সপ্তম দিন । ময়দানে লক্ষ মুখের ভাষা বিস্ফোরিত হয়,
                                           "এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ।"
                                         মুক্তির শকওয়েব আরও একধাপ এগিয়ে উচ্চারিত হয়,
                                            "এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ ।"

             
                   বাংলার শহর, বন্দরে, গ্রামে তীব্র প্রতিবাদ,
                   এবার সত্যই হবে শোষক-শোষিতের বিবাদ। 

যমরাজ মন্ত্র পড়ে নেমে আসে ঢাকার বুকে ।
পঁচিশতম রাত । কট কট রাইফেলের শব্দ,
রক্তাক্ত ঢাকা, জন্ম হয় লালা পতকা ।

                                     সৈনিক নেতা ঘোষণা দেয়, স্বাধীনতা জন্মেছে
                                      আর ভয় নেই । কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-সৈনিক,
                                      যুদ্ধ করে আমৃত্যু নির্ভীক ।

ঘরে ঘরে বাজে বাংলার সুর
গানে-গানে স্বাধীনতার তাল,
এভাবেই যুদ্ধ, মার্চ উত্তাল ।

Tuesday 19 March 2013

ভুল কালে

ক্লান্তি-ক্ষুধা শেষ করে দেয় যত জমানো বটুয়া,
নূর হোসেন, তুমি যতই পেডেল মার কাজ হবেনা ।
জরিনা আর অপেক্ষায় নেই, ভুলেছে সব গতদিন,
মধুমিতার রঙ্গিন পর্দার বদৌলতে ও এখন জেরিন ।

নাম পাল্টেছে, কাল পাল্টেছে, পাল্টেছে দেশ,
তোমার রিকশা ছুঁতে পারেনা মটর গাড়ী ।
ভুল কালে, ভুল তালে, চলে বাংলাদেশ,
তোমার সম্মুখে বিশাল দরজা, ওপারে জেরিনের বাড়ি ।

অভিজাত বাড়ির বসার ঘর,
ভরা আছে হাজার সো-পিচ,দোতলার কাঠের ধাপ,
বৃক্ষশূণ্য নূর হোসেনের গ্রামটাও হলো পর,
জেরিনের দেহময় ঘুরে বেড়ায় ঊর্ণনাভ ।

আজকাল কিছু উট দেখা যায়,
শত ঋণদাতা মুচকে মুচকে হাসে,
সবুজ উজাড় মরু ভেবে কেউ সুখ পায় ।
রঙ্গিন কোমল পানীয় বিশুদ্ধ জল নাশে ।

তোমার দরীদ্র বুক ছিল গণতন্ত্রের শপথে,
স্বৈরতন্ত্র নিপাতের যে ডাক তুমি দিয়েছিলে তা পৌঁছেনি,
ক্ষমতার খোলস বদলে অভিজাত উঠেছে নব রথে,
নাম পাল্টে শুধু জেরিন হয়েছে জেনি ।

নূর হোসেন তোমার রিকশাটা পুড়িয়ে দাও,
রিকশার চেইনটা বানাও গলার মালা,
সারা বাংলায় আগুন জ্বালাও,
চেইন ঘুরিয়ে ভেঙ্গে দাও অভিজাতের কাঁচের দরজা-জানালা ।


লেখক- শাহারীয়ার ওয়াহেদ
গর্জনিয়া,রামু,কক্সবাজার।